আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে অম্ল বা অ্যাসিড, ক্ষার এবং লবণ রয়েছে। এসবের মধ্যে অনেক অ্যাসিড, ক্ষার এবং লবণ প্রাকৃতিকভাবেই (naturally) পাওয়া যায়। যেমন, লেবুর রস ও কমলাতে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, তেঁতুলে থাকে টারটারিক অ্যাসিড এবং দুধে থাকে ম্যালিক অ্যাসিড। একইভাবে চুনের পানি হচ্ছে ক্ষার। সমুদ্রের পানিতে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড যা পরিশোধিত করে আমরা খাবার লবণ হিসেবে ব্যবহার করি। এইসব অম্ল, ক্ষার ও লবণের রাসায়নিক ধর্ম ভিন্ন, কাজেই ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার রয়েছে।
9.1 অম্ল বা অ্যাসিড (Acid)
তোমরা নিশ্চয়ই কখনো না কখনো অ্যাসিডের নাম শুনেছ। অ্যাসিড হচ্ছে এমন এক ধরনের পদার্থ, যার জলীয় দ্রবণ টক স্বাদযুক্ত, এটি নীল লিটমাস পেপারকে লাল করতে পারে এবং ক্ষারকে প্রশমিত (neutralize) করতে পারে। লিটমাস পেপার হচ্ছে বিশেষ একধরনের কাগজ, যেখানে লাইকেন (lichen) নামক এক ধরনের গাছ থেকে প্রাপ্ত রং মেশানো হয়। কোনো দ্রবণ অ্যাসিডিক না ক্ষারীয় তা পরীক্ষা করতে লিটমাস পেপার ব্যবহার করা হয়। অম্লীয় বা অ্যাসিডিক দ্রবণ নীল লিটমাস পেপারকে লাল করে এবং ক্ষারীয় দ্রবণ লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে।
লেবুর রসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে। তোমার কাছে যদি একটি লাল ও একটি নীল রঙের লিটমাস পেপার থাকে তাহলে তুমি দেখবে যদি লেবুর রসে লাল লিটমাস পেপার ডুবানো হয় তাহলে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না, যার ফলে লিটমাস পেপারের রঙের কোনো পরিবর্তন হয় না। অন্যদিকে, যখন নীল লিটমাস পেপার লেবুর রসে ডুবানো হয়, তখন লিটমাসের সাথে লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ার ফলে কাগজের রঙের পরিবর্তন হয়ে লাল হয়ে যায়।
লেবুর রসের মতো আমলকী, করমচা, কামরাঙা, বাতাবি লেবু, ইত্যাদি ফলগুলো টক স্বাদযুক্ত হয়, তার কারণ এই ফলগুলোতেও নানা রকমের অ্যাসিড থাকে। তোমরা এখন লেবুর রসের পরিবর্তে আমলকী, পেয়ারা, ইত্যাদি ফল নিয়ে লিটমাস পেপার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারো লিটমাস পেপারের রঙের কী পরিবর্তন ঘটে।
পাশের টেবিলে কয়েকটি অ্যাসিডের নামসহ সংকেত উল্লেখ করা হয়েছে। টেবিলে উল্লেখিত সবকটি অ্যাসিডের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল রয়েছে, সেটি হচ্ছে এই অ্যাসিডের সবগুলোর মধ্যেই এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু (H) আছে এবং এরা প্রত্যেকেই পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) তৈরি করে। কাজেই আমরা বলতে পারি, অ্যাসিড হলো ঐ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যাদের মধ্যে এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং যারা পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) উৎপন্ন করে।
উদাহরণস্বরূপ, পানিতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCI) ও এসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH)-এর রাসায়নিক সমীকরণ দুটি লক্ষ করতে পারো:
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>H</mi><mi>C</mi><mi>l</mi><mover><mo>→</mo><mrow><msub><mi>H</mi><mn>2</mn></msub><mi>O</mi></mrow></mover><msup><mi>H</mi><mo>+</mo></msup><mo>+</mo><mo> </mo><mi>C</mi><msup><mi>l</mi><mo>-</mo></msup></math>
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mi>C</mi><msub><mi>H</mi><mn>3</mn></msub><mi>C</mi><mi>O</mi><mi>O</mi><mi>H</mi><mo> </mo><mover><mo>→</mo><mrow><msub><mi>H</mi><mn>2</mn></msub><mi>O</mi></mrow></mover><msup><mi>H</mi><mo>+</mo></msup><mo> </mo><mo>+</mo><mo> </mo><mi>C</mi><msub><mi>H</mi><mn>3</mn></msub><mi>C</mi><mi>O</mi><msup><mi>O</mi><mo>-</mo></msup></math>
এই দুটি অ্যাসিডই পানির সংস্পর্শে এসে হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করেছে। তবে পদার্থের মধ্যে হাইড্রোজেন পরমাণু থাকলেই সেটি অ্যাসিড হবে না। তোমরা নিশ্চয়ই মিথেন গ্যাসের নাম শুনেছ, আমাদের দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের পুরোটাই মিথেন এবং এর সংকেত হচ্ছে CH₁। এতে 4টি হাইড্রোজেন পরমাণু রয়েছে কিন্তু মিথেন অ্যাসিড নয়, কারণ মিথেন পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) উৎপন্ন করে না।
9.2 ফার (Base)
ক্ষার হচ্ছে এমন এক ধরনের পদার্থ যার জলীয় দ্রবণ তিক্ত স্বাদযুক্ত হয়, লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে এবং যা অ্যাসিডকে প্রশমিত (neutralize) করতে পারে।
চুনের পানি হচ্ছে এক ধরনের ক্ষার, এখানে রয়েছে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)₂)। তোমার কাছে যদি একটি লাল ও একটি নীল রঙের লিটমাস পেপার থাকে তাহলে তুমি আবার একটি পরীক্ষা করে দেখতে পারবে। তুমি যদি চুনের পানিতে নীল লিটমাস পেপার ডুবাও তুমি দেখবে তাহলে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না, যার ফলে লিটমাস পেপারের রঙের কোনো পরিবর্তন হয় না। অন্যদিকে, যদি লাল লিটমাস পেপার চুনের পানিতে ডুবানো হয়, তখন লিটমাসের সাথে চুনের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের বিক্রিয়ার ফলে লিটমাস পেপারের রঙের পরিবর্তন হয়ে নীল হয়ে যায়।
এখানে চুনের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)2) -এর মতো যে সকল রাসায়নিক পদার্থ লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে তাদেরকে আমরা কখনো কখনো ক্ষারক বলে থাকি। কিছু ক্ষারক আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয় (যেমন: NaOH, NH4OH, Ca(OH)₂), আবার কিছু কিছু ক্ষারক আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয় না (যেমন, অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Al(OH)3)। যে সকল ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয়, তাদেরকে ক্ষার বলে। সুতরাং, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH), অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH4OH) ও ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)2) হচ্ছে ক্ষার জাতীয় ক্ষারক। অন্যদিকে, অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Al(OH)3) হচ্ছে ক্ষারক কিন্তু যেহেতু পানিতে দ্রবীভূত হয় না তাই এটি ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়। অতএব, বলা যায় যে, "সকল ক্ষার ক্ষারক হলেও সকল ক্ষারক ক্ষার নয়"।
ক্ষারক হলো সেই সকল রাসায়নিক পদার্থ যাদের মধ্যে অক্সিজেন (০) ও হাইড্রোজেন (H) পরমাণু থাকে এবং যারা পানিতে হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH-) তৈরি করতে পারে, যেমন:
এখানে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH), অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH4OH) ও ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)2) এর মধ্যে অক্সিজেন (০) ও হাইড্রোজেন (H) পরমাণু রয়েছে এবং এরা পানিতে (H₂O) হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH-) উৎপন্ন করেছে। সুতরাং এরা ক্ষারক।
তবে কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ, যেমন: ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) বা অ্যামোনিয়া (NH3) যাদের মধ্যে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের যে কোন একটি রয়েছে কিন্তু এরা পানিতে OH- আয়ন তৈরি করতে পারে, তাই এদেরকেও ক্ষারক বলা হয়। পানিতে ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) ও অ্যামোনিয়া (NH3) -এর বিক্রিয়া দুটি দেখানো হলো :
তোমার সবাই জানো যে সাবান স্পর্শ করলে পিচ্ছিল মনে হয়। এর কারণ হলো সাবানে ক্ষার থাকে। তাহলে ক্ষার ও ক্ষারক উভয়েরই একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা পিচ্ছিল হয় এবং এরা কটু স্বাদযুক্তও হয়।
9.3 লবণ (salt)
দৈনন্দিন কথাবার্তায় লবণ বলতে আমরা সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) বা যে লবণ আমাদের খাওয়ার সময় ব্যবহার করে থাকি সেটা বুঝিয়ে থাকি, কিন্তু লবণ শব্দটি বিজ্ঞানে আর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। লবণ হচ্ছে একটি আয়নিক যৌগ যেখানে একটি ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন (ক্যাটায়ন) ও ঋণাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন (অ্যানায়ন) সংযুক্ত থাকে। বিভিন্ন অ্যাসিড এবং ক্ষারের মধ্যে প্রশমন বা নিরপেক্ষকরণ (neutralization) বিক্রিয়ার ফলে নানা ধরনের লবণ এবং একই সাথে পানিও উৎপন্ন হয়। লবণ একটি নিরপেক্ষ পদার্থ যার জলীয় দ্রবণ লিটমাস পেপারের রঙের কোনো পরিবর্তন করে না। সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) সবচেয়ে পরিচিত লবণের একটি উদাহরণ, এই লবণ খাদ্যে ব্যবহার ছাড়াও প্রতিদিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে লাগে। তোমরা হয়তো জানো যে সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) রয়েছে এবং এই কারণে সমুদ্রের পানি নোনতা বা লবণাক্ত স্বাদযুক্ত হয়।
নিচের সমীকরণে অ্যাসিড এবং ক্ষারের বিক্রিয়ার ফলে লবণ তৈরির একটি উদাহরণ দেখানো হলো :
৭.৭ অ্যাসিড ও ক্ষারকের ব্যবহার
আমদের দৈনন্দিন জীবনে অ্যাসিড ও ক্ষার বা ক্ষারক জাতীয় পদার্থের নানা ধরণের ব্যবহার রয়েছে।
9.4.1 অ্যাসিডের ব্যবহার
1) ভিনেগার বা এসিটিক অ্যাসিড খাবার সংরক্ষণ করতে ব্যবহার করা হয়। এসিটিক অ্যাসিড কালি এবং রঙের জন্য দ্রাবক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
2) ফলমূল এবং সবজিতে যে সকল অ্যাসিড পাওয়া যায় তাদেরকে জৈব অ্যাসিড বলে। যেমন লেবু, কমলা এবং অন্যান্য সাইট্রাস (citrus) জাতীয় ফল এবং সবজিতে সাইট্রিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। খাদ্য শিল্পে কিছু কিছু নির্দিষ্ট খাবারের স্বাদ বাড়াতে এবং ক্ষতিকারক জীবাণুকে ধ্বংস করার জন্য সাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। জৈব অ্যাসিডের মধ্যে কোনো কোনোটি মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। যেমন, এসকরবিক অ্যাসিডকে (ascorbic acid) আমরা ভিটামিন সি বলে থাকি, এর অভাবে মানবদেহে স্কার্ভি রোগ হয়ে থাকে।
3) আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং শিল্প কারখানায় বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিডের ব্যবহার রয়েছে। টয়লেট পরিষ্কারের জন্য যে সমস্ত পরিষ্কারক ব্যবহার করা হয় তাতে অ্যাসিড থাকে। সোনার গহনা তৈরি করার সময় স্বর্ণকারগণ নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সার উৎপাদনের জন্য নাইট্রিক অ্যাসিড প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খনি থেকে সোনার মতো মূল্যবান ধাতু আহরণে ও রকেটের জ্বালানির সাথে HNO3 ব্যবহার করা হয়।
নাইট্রিক অ্যাসিড ছাড়া সালফিউরিক অ্যাসিডেরও (H₂SO₄) ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। যেমন: আইপিএস, গাড়ি, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, তাতে H₂SO₄ থাকে। এছাড়া, ডিটারজেন্ট, নানা রকমের রং, কীটনাশক, কাগজ ও বিস্ফোরক তৈরিতে প্রচুর H₂SO₄ ব্যবহৃত হয়। একটি দেশ কতটুকু H₂SO₄ ব্যবহার করে তা থেকে দেশটি কতটুকু শিল্পোন্নত সেটি বোঝা যায়!
4) আমরা যে খাবার খাই তা হজম করার জন্য পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) রয়েছে। এছাড়া ইস্পাত তৈরির কারখানা, ঔষধ, চামড়া শিল্পেও HCl ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন কোমল পানীয়তে অন্যতম উপাদান হিসেবে কার্বনিক অ্যাসিড (H₂CO₃) ও অল্প পরিমাণ ফসফরিক অ্যাসিড (H₃PO₄) থাকে।
যেসব অ্যাসিড প্রকৃতিতে প্রাপ্ত নানা রকম খনিজ পদার্থ থেকে তৈরি করা হয় তাদেরকে খনিজ অ্যাসিড (mineral acids) বলে। হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, ইত্যাদি হলো খনিজ অ্যাসিডের উদাহরণ। এই অ্যাসিডগুলো খাওয়ার উপযোগী নয় এবং এরা মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব অ্যাসিড আমাদের ত্বকে লাগলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়।
9.4.2 ক্ষার বা ক্ষারকের ব্যবহার
1) ব্লিচিং পাউডার আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। এই বহুল ব্যবহৃত ব্লিচিং পাউডার তৈরি হয় ক্ষারক ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)₂) ও ক্লোরিন (Cl₂) গ্যাসের বিক্রিয়ার মাধ্যমে। Ca(OH)2 -এর পাতলা দ্রবণ যা চুনের পানি বা লাইম ওয়াটার (lime water) নামে পরিচিত, সেটি ঘরবাড়ি চুনকাম করতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, Ca(OH)2 ও পানির সমন্বয়ে তৈরি পেস্ট যা মিল্ক অব লাইম (milk 2 of lime) নামে পরিচিত, তা পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হয়।
2) সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) সাবান এবং কাগজ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এটি রেয়ন উৎপাদনেও ব্যবহৃত হয়।
3) আমাদের পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটি হলে আমরা এন্টাসিড ঔষধ খেয়ে থাকি। এই এন্টাসিড ঔষধ হলো মূলত ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Mg(OH)₂) যা সাসপেনশানও ট্যাবলেট দুভাবেই পাওয়া যায়। ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সাসপেনশান মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া (milk of magnesia) নামে পরিচিত। কখনো কখনো এন্টাসিড ঔষধে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইডও (Al(OH)3) থাকে।
4) গবেষণাগারে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NH4OH) একটি অতি প্রয়োজনীয় বিকারক।
9.5 অ্যাসিড ও ক্ষারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাসিড ও ক্ষারের কিছু বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করা হলো:
9.5.1 ধাতুর সাথে অ্যাসিডের বিক্রিয়া
ধাতু, যেমন: দস্তা (Zn) ও সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄) -এর বিক্রিয়ায় লবণ এবং হাইড্রোজেন গ্যাস (H₂) উৎপন্ন হয়। নিচে বিক্রিয়াটি দেখানো হলো:
Zn + H₂SO₄ → ZnSO4 + H₂↑
সালফিউরিক অ্যাসিডের মতো প্রায় সকল অ্যাসিডই ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। ধাতু ও অ্যাসিডের আরও একটি বিক্রিয়া নিচে দেখানো হলো:
Mg + 2HCl → MgCl2 + H₂↑
9.5.2 অ্যাসিডের সঙ্গে ক্ষারের বিক্রিয়া
H₂SO₄ একটি অ্যাসিড এবং Ca(OH)2 একটি ক্ষার, এই দুটি বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম সালফেট (CaSO4) ও পানি উৎপন্ন করে। নিচের বিক্রিয়াটি দেখানো হলো :
Ca(OH)2 + H₂SO4 → CaSO4 + H₂O
এখানে উৎপন্ন CaSO, হলো একটি লবণ। অর্থাৎ অ্যাসিড ও ক্ষারের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন প্রধান উপাদানটি হচ্ছে লবণ। অ্যাসিড ও ক্ষারের আরও একটি বিক্রিয়া নিচে দেওয়া হলো:
NaOH + HCl → NaCl + H₂O
9.5.3 কার্বনেটের সঙ্গে অ্যাসিডের বিক্রিয়া
প্রায় সকল অ্যাসিডই কার্বনেটের সাথে বিক্রিয়া করে CO₂ গ্যাস উৎপন্ন করে। নিচে চুনাপাথরের 2 (CaCO₃) সাথে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের (HCl) বিক্রিয়াটি দেখানো হলো :
CaCO3 + HCl → CaCl₂ + H₂O + CO2↑
কখনো কখনো অ্যাসিডের এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে উৎপন্ন CO₂ আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার 2 করা হয়।
নিচে খাবার সোডা (NaHCO₃) ও HCl -এর বিক্রিয়ায় কী উৎপন্ন হয় সেটি দেখানো হল :
NaHCO3 + HCl → NaCl + H2O + CO2↑
নিজে করো:
উপরের বিক্রিয়াগুলোর বেশকিছু সমতাকরণ না করে দেখানো হয়েছে। তোমরা কী এগুলো সমতাকরণ করতে পারবে?
Read more